টিভি খুললেই এখন আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন রকমের ধর্মীয় বিজ্ঞাপন। খবরের কাগজে রাশি রাশি তান্ত্রিক দাবী করেন তারা যে কোন ইচ্ছা পাঁচ কিংবা দশ মিনিটে পূরণ করে দেবেন এবং তা গ্যরান্টী সহযোগে। যা স্বয়ং ভগবানও দাবী করেন না। সুলেমানী তন্ত্র থেকে হনুমান যন্ত্র সব কিছু এখন সহজলভ্য এবং অর্থের বিনিময়ে এই সকল ধর্ম ব্যবসায়ীরা আপনার বিধাতার লেখন বদলে দিয়ে আপনার বিধিলিপি নতুন করে লেখে দেবে এই ধারনা আপনি যদি করে থাকেন তাহলে জেনে রাখুন আপনার কষ্টার্জিত ধন আপনি কতকগুলি প্রতারক দের হাতে তুলে দিচ্ছেন মাত্র। মানুষের কিছু আবেগ কে সুড়সুড়ি দিয়ে এরা ফুলে ফেঁপে ঢোল হচ্ছে। ধর্মের উপর মানুষের যে মহান বিশ্বাস সেই বিশ্বাস কে নিয়েই এইসব প্রতারক রা ব্যবসা করে।
শনি রক্ষা কবচ – নীল কালো কাঁচের ছোট বড় কিছু পুঁতি যার দাম বাজারে হয়তো বড় জোর দশ টাকা, আপনাকে শনির প্রকোপের ভয় দেখিয়ে বিক্রি করা হল এক হাজার নয়শো নিরানব্বই টাকায়। মানুষের জীবনে সুখ কিংবা দুঃখের প্রবাহ সব সময় সমান ভাবে বয়ে যায় এমন নয়। ভালো সময় যেমন আসে, খারাপ সময় ঠিক তেমনই আসে তার জন্য শনি কবচ দরকার নেই, যেটা দরকার সেটা হল বিচার-বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। নিজের দোষ-ত্রুটি গুলিকে স্বীকার করে নিয়ে তার সংশোধন। তাহলে খারাপ সময়টাকে আপনি নিজেই ভালো করে গড়ে তুলতে পারেন। আর ভগবান-ঈশ্বর-আল্লা ইত্যাদিতে যদি বিশ্বাস থাকে তা আপনার অতিরিক্ত পাওনা। যা আপনাকে সৎ, চৈতন্যময় এবং আনন্দিত থাকতে সাহায্য করবে। রক্ত-মুখী নীলা, শনি রক্ষা কবচ পরে আপনার কিছুই হবে না যদি আপনি নিজে থেকে সচেষ্ট না হন। ঐ জিনিস গুলি ধারণ করে আপনার অবস্থার উন্নতি না হলে আপনি আরও বেশী করে ভেঙে পড়বেন। আর সব থেকে খারাপ ব্যাপার যেটা হবে সেটা হল আপনি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস হারাবেন, দৈব কে খুব খেলো করে দেখবেন, কতকগুলি ধর্ম ব্যবসায়ীর ভণ্ডামির জন্য আপনি হারাবেন সত্যিকারের ভগবান কে আপনার অন্তর থেকে।
হনুমান চালিশা যদি একটি বলির পাঁঠার গলায় ঝুলিয়ে রাখা হয় তাও আবার কাঁচের মধ্যে লিখে যা হনুমানের মাথা ফুটো করে লেখা আছে তাহলে পাঁঠাটির কি কোন রকম উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে আপনার মনে হয়। আসলে হনুমান চালিশা হল পরম বৈষ্ণব শ্রী হনুমানের গুন গান স্তব। যা পাঠ করে আপনি সেই পরম বৈষ্ণবের নাম-মাহাত্ম্য-লীলা আদি অনুধাবন করতে পারবেন, এবং আপনার আচরণে পরিবর্তন এনে হনুমান চালিশা আপনাকে বীর-সাহসী-সৎ এবং ভক্তিমান হতে সাহায্য করবে, আপনার হৃদয়ে এক অফুরন্ত আনন্দ স্রোতের সৃজন করবে কিন্তু কখন? যখন আপনি তা পাঠ করে হৃদয়ঙ্গম করবেন, নাহলে গলায় ঝুলিয়ে রাখলে তা কতকগুলি বর্ণমালা হয়ে কাঁচের ভেতরে জ্বলজ্বল করবে শুধু। একটা হনুমান চালিশার পুস্তকের দাম বাজারে হয়তো দশ টাকার বেশী নয় আর আপনি সেটাই কায়দা করে কিনছেন তিন হাজার টাকায় এখন হিসাব করে বলুন তো হনুমান চালিশা আপনি পরে যা লাভ করছেন তার থেকে বেশী লাভ তারা হনুমান চালিশা বেচে করছেন।
শ্রী লক্ষ্মী পাদুকা যন্ত্র। মা লক্ষ্মী নাকি তার ঐ টুকু খড়ম খানি আপনার বাড়িতে রাখা আছে জানলেই এসে রয়ে যাবে আপনার বাড়িতে। প্রথমত মা লক্ষ্মী বলতে আপনি যা বোঝেন তা তো আছে ক্যলেণ্ডার আর বাঁধাই ফটো বা মন্দিরে ইট কাঠের মূর্তটিতে সেখানে আপনি কোথায় দেখেছেন যে মা লক্ষ্মী খড়ম পরে বসে আছেন? আর তিনি ধনের দেবী হয়ে আপনার থার্ড ক্লাস তামার উপর সস্তা সিটি গোল্ডের হাপ ইঞ্চি খড়মের লোভে আপনার উপর প্রসন্ন হতে যাবেন! পারেন আপনারা কুবেরের চাবিকাঠি গলায় ঝুলিয়ে রাখেন কুবেরের সিন্দুক কোথায় জানেন না! আপনার প্রচেষ্টা না থাকলে কোন কিছুই আপনি পাবেন না। আপনাকে ইচ্ছা, জ্ঞান, কর্ম সহায় করেই আপনার প্রতিটি কর্ম সফল হবে। পৃথিবীর বস্তু যা ছিল তা থাকবে আপনি এসেছেন, খেলা করবেন, খালি হাতে চলে যাবেন। কিন্তু শিকার হবেন কেন? আপনার যুক্তি বুদ্ধি সাধারণ জ্ঞান এই সব গুলিকে জলাঞ্জলি দিয়ে কেন আপনি ধর্ম ভ্রষ্ট হবেন। অন্ধ বিশ্বাসের বলি হয়ে আপনার কষ্টার্জিত পুরুষার্থ কে প্রতারকদের হাতে তুলে দেবেন কেন?
আপনি বলতে পারেন তাহলে ঐ সব প্রতিষ্ঠিত অভিনেতারা যে বলেন তারা ঐ সব জিনিস পরেই আজ এত বড় হয়েছেন তারা কি সবাই মিথ্যা বলে! না তারা মিথ্যা বলেন না তারা অভিনয় করেন। বিনিময়ে মোটা টাকা পান। আর বাকী যারা বলেন তারা সকলেই ওই লোক ঠকানো ব্যবসার সাথে জড়িত। আপনার মনে ওই সব জিনিসের প্রতি বিশ্বাস এনে দিতে পারলে আখেরে লাভ তাদের।
জানি আপনি বুদ্ধিমান। অন্তত নিজের বৌ-ছেলের কাছে তাই সেজে থাকেন। তাহলে এই সব পরা ছাড়ুন নিজের ইচ্ছা-জ্ঞান-কর্ম কে সুনিয়ন্ত্রিত করুন দেখবেন স্বয়ং ভগবান আপনার জন্য সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে এসেছে।
সকলের ভালো হোক, সকলেই সুখে থাকুক, ঈশ্বরের প্রতি গভীর বিশ্বাস থাকুক, নশ্বর কোন বস্তুতে নয়।
-ঐরাবত
দারুণ!! অনুপ্রাণিত হলাম।
ReplyDelete