তন্ত্র সাধনা দুই রকমের হয়ে থাকে। বিদ্যা সাধনা ও অবিদ্যা সাধনা। নিজের কুণ্ডলিনী শক্তিকে জাগ্রত করে তার যে অপার আনন্দময় অনুভূতি তা জগৎ ও জীবনের উন্নতিকল্পে নিয়োজিত করা হল বিদ্যা সাধনার লক্ষ্য। এবং অবিদ্যা সাধনার সাহায্যে সেই শক্তিকে জাগ্রত মনে করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি ইত্যাদি নানা রকম আভিচারিক ক্রিয়া করে নিজের এবং অপরের পরোক্ষে ক্ষতিসাধন করা খুবই নিকৃষ্ট মানের তন্ত্র সাধনা।
আজকাল তন্ত্র সাধনার একটা হিড়িক দেখা যায়। তথা কথিত তান্ত্রিক গন বশীকরণ সহ যে সমস্ত নিজ গুণ বিজ্ঞাপিত করে থাকেন তা কতদূর সম্ভাবনা ময় তা বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক মানসিকতা সম্পন্ন জিজ্ঞাসুরাই ঠিক করবেন। আমার আবেদন শুধু এইটুকু যে প্রতারিত হবেন না। এতে বিশ্বাস নষ্ট হয়। এই সমগ্র
পৃথিবী তার অলৌকিক ক্রিয়া সমূহ নিয়ে আপনাদের সামনে সকল সময়ই প্রত্যক্ষ আছেন। শুধু
শুধু কেন সামান্য মানুষের মানসিক বিকারের প্রত্যাশী হবেন। তন্ত্র বিদ্যা কেবল
মাত্র প্রাচীন বিজ্ঞান। তাই তন্ত্রকে জানতে অবশ্যই বিজ্ঞানের সহায়তাতেই জানতে হবে।
এর কোন অন্য পদ্ধতি নেই। সুতারং মানুষের বিশ্বাস নিয়ে ছেলে খেলা করে এমন তান্ত্রিক
দের ভণ্ডামি দেখলেই প্রতিবাদ করুন।
যেনে রাখবেন সেই তান্ত্রিক শক্তিমান যে ব্রহ্মাণ্ডের সকল
বস্তুর ভালো চান, সকল প্রাণীর সামান্যতম ব্যথা যার হৃদয়ে যন্ত্রণার উদ্রেক করে সেই
বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সাথে একাত্ম। সুখ দুখে যিনি সমদর্শী তিনি কাউকে সুখ দিতে গিয়ে
অপরজনকে দুঃখ কিভাবে দিতে পারেন। তাই শত্রু বিনাশ মন্ত্র দিয়ে হয় না। তার জন্য
দরকার নিজের আচরণের পরিবর্তন। আর তান্ত্রিক যদি মন্ত্র মেরে সকল কিছু করে দিতে
পারতো তাহলে তার ভাত টুকু মন্ত্র মেরে যোগাড় করে নিতে কতক্ষণ সময় লাগত। টাকার
বিনিময়ে তান্ত্রিক যদি কর্ম করে জানবেন সে তান্ত্রিক নয় তান্ত্রিকের রূপ ধারী
শয়তান। বলা হয়ে থাকে তন্ত্র বিদ্যা দেবাদিদেব মহাদেব হতে আগত। বলুন তো মহাদেব কত
টাকা নিয়েছিলেন এই বিদ্যা দেওয়ার জন্য।
তন্ত্র এই সব ঠুনকো জাগতিক ব্যাপার নয়। এ এক মহাবিদ্যা। এর
সঠিক আচরণে জীবন ও জগৎ সম্বন্ধে আপনার সম্যক জ্ঞান জন্মায়। যা আপনার চোখের সামনে
থেকে অজ্ঞানতার আবরণ সরিয়ে পৃথিবীর সকল রহস্য কে উন্মোচিত হতে সাহায্য করে।
অন্ধকার থেকে আলোর জীবনে নিয়ে আসে। আর এর প্রণেতা তিনি সেই কৈলাস শিখর নিবাসী মহান
বিজ্ঞানী।
দ্রব্যগুণ দেখে যদি অবাক হয়ে থাকেন তাহলে বলি প্রত্যেক
দ্রব্যের নিজস্ব গুণ তো অবশ্যই থাকবে। নুন খেলে নোনতা লাগবে, আবার ক্লোরোফর্ম
শুঁকলে অজ্ঞান তো হতেই হবে। তাই অবিদ্যা তান্ত্রিকরা যদি আপনাকে দ্রব্যগুণ দেখিয়ে
মোহিত করে ফেলে তার জন্য বলে রাখি মন যদি আপনার বৈজ্ঞানিক পথ না ছাড়ে তাহলে আপনার
ঠকবার ভয় থাকে না।
আর একটা কথা বলা উচিত, শব্দার্থ বিচারে তন্ত্র শব্দের মানে
যদি করা হয়ে থাকে শরীর সম্বন্ধীয় তাহলে তা ভুল। তন্ত্র হচ্ছে তা, যা সমস্ত জাগতিক
জিনিস কে ব্যাখ্যা করে জগৎ সম্বন্ধে আমাদের ভুল ধারনা গুলিকে দূর করে অজ্ঞানতা
থেকে মুক্তি দেয় বা ত্রাণ করে। আপনার সেই পঞ্চ ইন্দ্রিয় হল সেই সদাশিবের পাঁচটি
মুখ যা দিয়ে আপনি এই জগত সম্বন্ধে সকল তথ্য আরহন করে থাকেন। সেই পরমেশ্বরের সকল
কিছুই প্রপঞ্চ ময়। একটা প্রশ্ন নিজেকে করে দেখুন পৃথিবীর বেশীর ভাগ ফুলেই কেন
পাঁচটি পাপড়ি থাকে? কি অলৌকিক না! জয় শিব শম্ভু।
100%ঠিক বলছো !!!
ReplyDeleteএকদম ঠিক কথা....
ReplyDeleteতন্ত্রে যে ষট্ কর্মের কথা বলা হয়েছে সেটাও নিজের মন বা আত্ম উন্নতির কথা ই বলা হয়েছে ... যেমন বশীকরন অর্থাৎ নিজের মনকে বশ করার কথা বলা হয়েছে ,জাগতিক অর্থে মানুষকে বশ করা নয়...
salute u
ReplyDeleteকয়েকটি উচ্চ মানের বাংলা তন্ত্র শাস্ত্রের বইয়ের নাম দিন।
ReplyDelete