তুমি কে? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের অনেকের জানা নেই। তাই আমরা সহজেই উত্তর দিই আমি অমুক শর্মা বা তমুক সেখ। এইগুলি এক একটা নাম। এই নাম গুলির একটা অর্থ হয়। কিন্তু সেই নামের অর্থের সাথে আমার চরিত্রগত মিল থাকতেও পারে অথবা নাও থাকতে পারে। যাকে বলা যায় কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন। তাহলে নাম আমার যথার্থ স্বরূপ নয়। তাহলে আমার যথার্থ স্বরূপ কি? দেহ তো একটা চেয়ারের মত। যার মধ্যে বসে আমার চেতনা আমার জীবন পরিচালিত করে। আমার চেতনাই কি তাহলে আমি? অনেকটা সেই রকম হলেও চেতনাই আমি নয়। কারণ যখন আমি ঘুমিয়ে থাকি তখন আমার সাথে আমার চেতনাও ঘুমিয়ে থাকে। তাই বলে কি আমি তখন নেই! আছি নাহলে প্রত্যূষে শয্যা ত্যাগ করেই আবার জীবন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ি কিভাবে? আমার হৃদয়ের স্পন্দন, আমার রক্তের চলাচল, আমার হরমোন গ্রন্থি গুলির ক্ষরণ, আমার দেহকোষ গুলির বৃদ্ধি ইত্যাদি আমার চেতনার অগোচরেই হয়ে থাকে। তাহলে বোঝা যায় চেতনাকেও পরিচালিত করে এমন একজন যে আমার দেহের মধ্যেই অবস্থিত হয়ে আমার সর্বস্ব কিছুকে পরিচালিত করে – কিন্তু সে থাকে সাধারণ ভাবে আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সেই হল আসল আমি। তাকেই ধর্ম শাস্ত্রে বলা হয়েছে আত্মা। আত্মা অবিনাশী, মহা শক্তিধর, নিষ্কলুষ এবং বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সাথে একই যোগসূত্রে গ্রথিত। আত্মা কোনও খণ্ড চেতনা নয়। আত্মা বিশ্ব চেতনা। এই সমগ্র বিশ্বে তুমি-আমি-সে ইত্যাদির মত আত্মা কোন খণ্ডিত অংশ নয়। সে সদা পূর্ণ এবং পূর্ণ হতে পূর্ণ বিয়োগেও সে সদা পূর্ণ থাকে। বিয়োগ বলতে এখানে আমি বাদ বোঝাতে চাইছি না। বিয়োগ বলতে বিযুক্ত বা যা যুক্ত নয় তাই বোঝাতে চাইছি। উদাহরণ স্বরূপ ধরা যেতে পারে সমুদ্রের ধারে গিয়ে তুমি সমুদ্র থেকে এক ঘটী জল নিলে দেখতে পাবে ঘটির জলে আর ঢেউ উঠছে না। কিন্তু তোমার সামনের আদিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র রাশির সাথে তোমার ঘটির জলের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আবার তোমার ঘটির জল সমুদ্রে নিক্ষেপ করে দিলে দেখবে সেই জলে আর কোণ প্রভেদ নেই এবং পুনরায় সেই সমুদায় জল তরঙ্গায়িত। এখানে আমি যে ভূমিকাটি গ্রহণ করেছি তা হল বিযুক্ত। এই রকমই আমি সেই মহা চেতনা থেকে নিজেকে বিযুক্ত করে রাখি। তার ফলে আমার প্রকৃত স্বরূপ আমার কাছে অজানা। তাই আমি জানি না আমি কে? তাই চুপ করে যাই যখন কেউ জিজ্ঞেস করে তুমি কে?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment