মহাদেব তখন বললেন-
ত্রিদন্ডী (তিলকধারী) মাত্রেই ভক্ত ও সর্বদা বেদ চর্চা করে থাকে। যারা শাক্ত তারা
প্রকৃতিবাদী অর্থাৎ প্রকৃতিই শ্রেষ্ঠ এই মতবাদ প্রমাণ করেন। আর যারা শুন্যবাদী
অর্থাৎ বেদ-বেদান্ত ইত্যাদি প্রমানে বিশ্বাস করেন না তারা বৌদ্ধ। এই সব মতবাদের
উপরে যারা তারাই প্রকৃত তত্ত্বজ্ঞ, কিন্তু যারা চার্বাক তারা এই সকল কিছু মানেন না
এবং তারা যে সকল আলোচনা করে থাকেন সেই সমস্তকিছুই বিষয় নির্ভর।
দেবী বললেন- হে দেব উমা
আপনার কাছে জানতে চায় এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের লক্ষণ কি? পঞ্চভূতই বা কি কি এবং
পঁচিশ প্রকার গুণই বা কাকে বলে দয়া করে বলুন।
ঈশ্বর বললেন-
ব্রহ্মজ্ঞানে অস্থি, মাংস, নখ, ত্বক ও লোম এই পাঁচটি পৃথিবীর গুন বলে বর্নিত হয়েছে।
শুক্র, শোণিত, মজ্জা, মল, মুত্র এই পাঁচটি জলের গুণ বলে বর্নিত হয়েছে। নিদ্রা,
ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও আলস্য এই পাঁচটি অগ্নির গুণ বলে বর্নিত হয়েছে। ধারণ,
চালন, ক্ষেপণ, প্রসারণ ও সঙ্কোচণ এই পাঁচটি বায়ুর গুণ বলে বর্নিত হয়েছে। কাম,
ক্রোধ, লোভ, মোহ ও লজ্জা এই পাঁচটি আকাশের গুণ বলে বর্ণিত হয়েছে। আকাশ হতে বায়ু,
বায়ু হতে সূর্য(তেজ), সূর্য হতে জল এবং জল হতে পৃথিবীর উৎপত্তি হয়ে থাকে। এই
পৃথিবী জলে বিলীন হয়, জল সূর্যে বিলীন হয়, সূর্য বায়ুতে এবং বায়ু আকাশে লীন হয়ে
থাকে। এই পাঁচ প্রকার তত্ত্ব হতেই সৃষ্টি হয় এবং এই পঞ্চতত্ত্বেই সকল তত্ত্ব
লয়প্রাপ্ত হয়ে থাকে। এই পঞ্চবিধ তত্ত্বের পরে যে তত্ত্ব তাকেই বলে তত্ত্বাতীত বা
নিরঞ্জন। স্পর্শন, রসন, ঘ্রাণ, দর্শন এবং শ্রবণ এই পাঁচটি কর্মই ইন্দ্রিয়ের
পঞ্চতত্ত্ব আর এই সকল ইন্দ্রিয়ের কর্ম পরিচালিত করে মন(প্রধান)। এই ব্রহ্মাণ্ডের
সকল প্রকার লক্ষণ আমাদের এই দেহের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়। এর মধ্যে যেগুলি সাকার সেই
গুলির বিণাশ হয় এবং যেগুলি নিরাকার (আকার শুন্য) সেগুলি অবিনাশী।(সাকারাশ্চ
বিনশ্যন্তি নিরাকারো ন নশ্যতে)। যার মন নিরাকার সে নিরাকারসম হয়ে যায় আর নিরাকারের
বিনাশ নাই তাই সর্ব প্রকার প্রচেষ্টা করে সাকার চিন্তা পরিত্যাগ কর। (শ্লোক ১৭-৩১)
No comments:
Post a Comment