Social Icons

twitterfacebookgoogle pluslinkedinrss feedemail

Saturday, November 23, 2013

জ্ঞান সঙ্কলিণী তন্ত্র (ভাগ ৪)


দেবী বললেন- জীব কিভাবে শিবে পরিণত হয়? শিবের সেই প্রসন্নতার কার্য্য-কারন আমাকে বলুন। তখন মহাদেব বললেন- জীব ভ্রান্তিতে বদ্ধ থাকলেই জীব থাকে যখনই ভ্রান্তিমুক্ত হয়ে যায় তখন সে সদাশিবে পরিণত হয়।  তুমিই কার্য্য এবং তুমিই কারন এবং তোমার অন্তরের ভাবের জন্য তুমি এই কার্য্য ও কারণ কে বিশেষ ভাবে বোধ হয়। মন অন্যত্র, শিব অন্যত্র, শক্তি অন্যত্র, বায়ু অন্যত্র এই ভেবে এই তীর্থ সেই তীর্থ করে তামসিক জনেরাই ভ্রমন করে থাকে। হে প্রসন্ন চক্ষুধারী দেবী আত্মতীর্থ জ্ঞানহীন ব্যাক্তির মুক্তি কিভাবে সম্ভবপর হবে। বেদকে বেদ বলা যায় না, বেদ বলা যায় নিত্য সনাতন ব্রহ্মকে। যিনি সর্ব্বদা সর্ব্বত্র ব্রহ্মজ্ঞানে রত তিনিই যথার্থ ব্রাহ্মণ ও বেদজ্ঞ। যোগীগন চারি বেদ পাঠ করে ও সর্বশাস্ত্র মন্থন করে এর সার বস্তু পান করেছেন আর পণ্ডিত গন ঘোল পান করেছেন। সকল প্রকার শাস্ত্রই উচ্ছিষ্ট হয়েছে এবং সকল প্রকার বিদ্যাই মুখে মুখে রয়েছে কিন্তু সেই অব্যক্ত চেতনাময় ব্রহ্মজ্ঞান কখনোই উচ্ছিষ্ট হয়  নি। কারন ভাষা দিয়ে একে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।  ব্রহ্মচর্য্য ছাড়া আর কোন উত্তম তপস্যা নেই। যে ব্যাক্তি উর্দ্ধরেতা সে দেবতা মানুষ নয়। শুন্যের (নিরাকারের) ধ্যান ছাড়া আর কোন প্রকার ধ্যানই উত্তম নয়। এবং ধ্যান শুন্য কে অবলম্বন করলে তার প্রসাদে সুখ ও মোক্ষ এই দুইই লাভ হয়ে থাকে সে বিষয়ে কোন সংশয় নেই। সেই হোমের থেকে কোন বড় হোম নেই যেই হোমে ব্রহ্মাগ্নিতে প্রানরূপ ঘৃতের দ্বারা আহুতি প্রদান করা হয়। যজ্ঞহেতু যে হোম করা হয় তা হোমই নয়। পাপকর্ম্ম যা হওয়ার তা হবে এবং পুণ্যও প্রর্বত্ত হতে থাকবে এর জন্যই যারা বুদ্ধিমান তারা এই দুটিকেই সর্ব প্রযত্ন সহকারে পরিহার করে থাকেন।  যতক্ষন মানুষের মধ্যে বর্ণ কুল ইত্যাদি জ্ঞান থাকে ততক্ষণ মানুষের জ্ঞান জন্মায় না। মানুষের ব্রহ্মজ্ঞান যখনই হয়ে তখনই সব বর্ণ ও কুল বিবর্জন হয়ে যায়।
দেবী বললেন- আপনি জ্ঞানের যে বিশ্লেষণ করলেন তা আমার বোধগম্য হল না। হে শঙ্কর , হে দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যে জ্ঞানে মন একেবারে তন্ময় হয়ে যায় তা দয়া করে আমাকে বলুন।

মহাদেব বললেন- মন, বাক্য এবং কর্ম এই তিনটিই যখন লয় প্রাপ্ত হয় ও স্বপ্নবিহীন নিদ্রা যেমন সেই রকম কোন অবলম্বন ব্যতিরেকে যে জ্ঞান জন্মায় তাকেই ব্রহ্মজ্ঞান বলে। যে জ্ঞান দ্বারা মানুষ একাকী, স্পৃহাহীন, শান্ত, চিন্তাবিহীন, নিদ্রাবিরহিত ও বালকের মত ভাবসম্পন্ন হয় তাকেই ব্রহ্মজ্ঞান বলা হয়ে থাকে। এই অর্দ্ধশ্লোকের দ্বারা আমি তোমাকে বলছি যা তত্ত্বদর্শী মহাশয়েরা যোগ বিষয়ে বলেছেন তা হল সকল প্রকার বাইরের চিন্তা পরিত্যাগ করে চিন্তাশুন্য হলেই যোগ হয়। যে ব্যক্তি নিমেষ বা অর্দ্ধনিমেষ মাত্র সমাধি প্রাপ্ত হতে পারেন তার তৎক্ষনাৎ শত জন্মের পাপ নাশ হয়ে থাকে। (শ্লোক ৪৬-৬২)

Monday, November 18, 2013

জ্ঞান সঙ্কলিণী তন্ত্র -ভাগ ৩

দেবী বললেন- হে আদিনাথ সাত প্রকার ধাতু কি কি? আত্মা, অন্তরাত্মা এবং পরমাত্মাই বা কি তা আমাকে বলুন?

মহাদেব বললেন- শুক্র (বীর্য্য), শোণিত (রক্ত), মজ্জা, মেদ (চর্বি), মাংস এই পাঁচটি এবং অস্থি (হাড়) ও ত্বক এই সাত প্রকার ধাতু প্রত্যেক শরীরে অবস্থিত আছে। এই শরীরই আত্মা, মন হল অন্তরাত্মা এবং পরমাত্মা হল শূন্য যেখানে মন বিলীন হয়ে যায়। রক্তধাতু হল মাতা, শুক্রধাতু হল পিতা প্রাণ হল শুন্যধাতু এই শুক্র ও শোণিতের মিলনেই প্রাণ সমন্বিত গর্ভপিন্ড উৎপন্ন হয়ে থাকে। দেবী বললেন – কিভাবে বাক্যের উৎপত্তি হয় এবং কিভাবে বাক্যের লয়প্রাপ্তি ঘটে থাকে? বাক্য কিভাবে আমরা নির্ধারিত করতে পারি এবং আমাকে সেই বাক্যজ্ঞান উদাহরন সহকারে ব্যাখা করে বুঝিয়ে দিন। মহাদেব বললেন- অব্যক্ত হতে প্রান সৃষ্টি হয়, প্রাণ হতে মনের এবং মানস হতে বাক্যের সৃষ্টি হয় এবং মনেই বাক্য বিলীন হয়ে যায়। দেবী বললেন- দেহের কোন স্থানে সূর্যের অবস্থান, কোন স্থানে চন্দ্রের অবস্থান, কোন স্থানে বায়ুর অবস্থান এবং কোন স্থানেই বা মনের অবস্থান তা আমাকে বলুন? মহাদেব বললেন – তালুমুলে চন্দ্রের অবস্থান, নাভিমুলে সূর্য্যের অবস্থান। এবং সূর্যের অগ্রভাগে বায়ু ও চন্দ্রের অগ্রভাগে মনের অবস্থান। হে মহাদেবি সূর্য্যের অগ্রভাগে চিত্তের এবং চন্দ্রের অগ্রভাগে প্রাণের এই অবস্থান সম্বন্ধীয় যুক্তি গুরুর উপদেশ ক্রমে লাভ হয়ে থাকে। দেবী বললেন- দেহের কোন স্থানে শক্তির  অবস্থান, কোন স্থানে শিবের অবস্থান, কোন স্থানে কাল অবস্থান করেন? দেহের মধ্যে জরার কিভাবে ও কেন উৎপত্তি হয়ে থাকে তা আমাকে বলুন। মহাদেব বললেন- পাতালে শক্তি, ব্রহ্মাণ্ডে শিব ও অন্তরীক্ষে কালের অবস্থান এবং এই কাল হতেই জরার উৎপত্তি হয়ে থাকে। দেবী বললেন- আহার কে আকাঙ্খা করে, কে পান ভোজনে তৃপ্ত হয়? কার বুদ্ধিই বা জাগ্রত, স্বপ্ন বা নিদ্রিত অবস্থায় ক্রিয়াশীল থাকে? মহাদেব বললেন- প্রান আহারের আকাঙ্খা করে। অগ্নি পান-ভোজনের দ্বারা তৃপ্ত হয় আর বায়ু জাগ্রত, স্বপ্ন ও সুষুপ্ত অবস্থায় প্রতিবুদ্ধ থাকে। দেবী তখন জিজ্ঞেস করলেন – হে মহাদেব কর্ম কে করে? কেইবা পাপে লিপ্ত হয়? কে পাপকার্য্য সম্পাদন করে এবং কেইবা সে পাপ হতে মুক্তি লাভ করে থাকে? মহাদেব বললেন- মনই পাপ করে, মনই পাপে লিপ্ত হয়ে থাকে এবং সেই মনই যখন উণ্মনা(মুক্ত) হয় তখন আর তার পাপ পুণ্য থাকে না। (শ্লোক-৩১-৪৫)

Thursday, November 14, 2013

জ্ঞান সঙ্কলিণী তন্ত্র (ভাগ ২)


মহাদেব তখন বললেন- ত্রিদন্ডী (তিলকধারী) মাত্রেই ভক্ত ও সর্বদা বেদ চর্চা করে থাকে। যারা শাক্ত তারা প্রকৃতিবাদী অর্থাৎ প্রকৃতিই শ্রেষ্ঠ এই মতবাদ প্রমাণ করেন। আর যারা শুন্যবাদী অর্থাৎ বেদ-বেদান্ত ইত্যাদি প্রমানে বিশ্বাস করেন না তারা বৌদ্ধ। এই সব মতবাদের উপরে যারা তারাই প্রকৃত তত্ত্বজ্ঞ, কিন্তু যারা চার্বাক তারা এই সকল কিছু মানেন না এবং তারা যে সকল আলোচনা করে থাকেন সেই সমস্তকিছুই বিষয় নির্ভর।
দেবী বললেন- হে দেব উমা আপনার কাছে জানতে চায় এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের লক্ষণ কি? পঞ্চভূতই বা কি কি এবং পঁচিশ প্রকার গুণই বা কাকে বলে দয়া করে বলুন।

ঈশ্বর বললেন- ব্রহ্মজ্ঞানে অস্থি, মাংস, নখ, ত্বক ও লোম এই পাঁচটি পৃথিবীর গুন বলে বর্নিত হয়েছে। শুক্র, শোণিত, মজ্জা, মল, মুত্র এই পাঁচটি জলের গুণ বলে বর্নিত হয়েছে। নিদ্রা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও আলস্য এই পাঁচটি অগ্নির গুণ বলে বর্নিত হয়েছে। ধারণ, চালন, ক্ষেপণ, প্রসারণ ও সঙ্কোচণ এই পাঁচটি বায়ুর গুণ বলে বর্নিত হয়েছে। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ ও লজ্জা এই পাঁচটি আকাশের গুণ বলে বর্ণিত হয়েছে। আকাশ হতে বায়ু, বায়ু হতে সূর্য(তেজ), সূর্য হতে জল এবং জল হতে পৃথিবীর উৎপত্তি হয়ে থাকে। এই পৃথিবী জলে বিলীন হয়, জল সূর্যে বিলীন হয়, সূর্য বায়ুতে এবং বায়ু আকাশে লীন হয়ে থাকে। এই পাঁচ প্রকার তত্ত্ব হতেই সৃষ্টি হয় এবং এই পঞ্চতত্ত্বেই সকল তত্ত্ব লয়প্রাপ্ত হয়ে থাকে। এই পঞ্চবিধ তত্ত্বের পরে যে তত্ত্ব তাকেই বলে তত্ত্বাতীত বা নিরঞ্জন। স্পর্শন, রসন, ঘ্রাণ, দর্শন এবং শ্রবণ এই পাঁচটি কর্মই ইন্দ্রিয়ের পঞ্চতত্ত্ব আর এই সকল ইন্দ্রিয়ের কর্ম পরিচালিত করে মন(প্রধান)। এই ব্রহ্মাণ্ডের সকল প্রকার লক্ষণ আমাদের এই দেহের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়। এর মধ্যে যেগুলি সাকার সেই গুলির বিণাশ হয় এবং যেগুলি নিরাকার (আকার শুন্য) সেগুলি অবিনাশী।(সাকারাশ্চ বিনশ্যন্তি নিরাকারো ন নশ্যতে)। যার মন নিরাকার সে নিরাকারসম হয়ে যায় আর নিরাকারের বিনাশ নাই তাই সর্ব প্রকার প্রচেষ্টা করে সাকার চিন্তা পরিত্যাগ কর। (শ্লোক ১৭-৩১) 
  
 

Nataraja


Nataraj
Nataraja

Tantrik

Tantrik
Tantrik

Yabyum

Yabyum
Yabyum