Social Icons

twitterfacebookgoogle pluslinkedinrss feedemail

Saturday, August 09, 2014

ভক্তি কি?

lord_shivas_family

বিজ্ঞান হচ্ছে পরমতত্ত্ব। বিজ্ঞান হল সেই জ্ঞান যে জ্ঞানের উদয় হলে ‘আমি ব্রহ্ম’ এরূপ বিশ্বাসে মন দৃঢ় হয়। ব্রহ্ম ছাড়া আর অন্য কোন বস্তুর কথা মনেও আসে না এবং সেই বিজ্ঞানী মানুষের বুদ্ধি সর্বতোভাবে শুদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেই বিজ্ঞান দুর্লভ। জগতে সেই শুদ্ধ জ্ঞানের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ কম। সেই বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানী যা এবং যেমন তা সর্বদাই শিব স্বরূপ সাক্ষাত পরাৎপর ব্রহ্ম।

কিন্তু সেই বিজ্ঞান লাভের পথ হল বিশুদ্ধ শিব ভক্তি। এই ভক্তিই হল ওই বিজ্ঞানের মাতৃ স্বরূপ যা ভোগ ও মোক্ষ রূপ ফল প্রদানকারী। আর বাবা মহাদেবের কৃপাতেই মানুষ সেই ভক্তি লাভ করতে পারে। ভক্তি ও জ্ঞানে কোন কোনও পার্থক্য নেই। ভক্ত ও জ্ঞানী উভয়েই সর্বদা সুখদায়ক হয়ে থাকেন। যিনি ভক্তির বিরোধী তাঁর জ্ঞান লাভ হয় না।

“ভক্তৌ জ্ঞানে ন ভেদো হি তৎকর্তুঃ সর্বদা সুখম্‌ ।

বিজ্ঞানং ন ভবত্যেব সতি ভক্তি বিরোধিনঃ ।।

ভক্তাধীনঃ সদাহং বৈ তৎ প্রভাবাদ্‌ গৃহেষ্বপি।

নীচানং জাতিহীনানাং যামি দেবি ন সংশয়ঃ ।।”(শিবপুরাণ রুদ্রসংহিতা)

মহাদেব মহেশ্বর সর্বদা ভক্তের অধীন থাকেন এবং ভক্তির প্রভাবে জাতি হীন নীচ মানুষদের গৃহেও তিনি অবস্থান করেন। গুণ ভেদে ভক্তি দুই রকম – সগুণা এবং নির্গুণা। যে ভক্তি শাস্ত্রবিধি দ্বারা প্রেরিত বা বৈধী অথবা হৃদয়ের সহজ অনুরাগ দ্বারা প্রেরিত বা স্বাভাবিক সেই ভক্তিই উচ্চকোটির ভক্তি। এছাড়া যে কামনামূলক ভক্তি হয়ে থাকে তা নিম্নকোটির ভক্তি। সগুণ এবং নির্গুণ ভক্তি আবার নৈষ্ঠিকী ও অনৈষ্ঠকী ভেদে দুই ভাগে বিভক্ত। নৈষ্ঠিকী ভক্তি ছয় প্রকারের এবং অনৈষ্ঠকী ভক্তি একই প্রকারের হয়। প্রকৃত বিদ্বান ব্যক্তি বিহিতা এবং অবিহিতা ভেদে নানা প্রকারের বলে মনে করে থাকেন। সগুণা এবং নির্গুণা উভয় ভক্তির নয়টি অঙ্গ।

“শ্রবণং কীর্তনং চৈব স্মরণং সেবনং তথা।

দাস্য তথার্চনং দেবি বন্দনং মম সর্বদা।।

সখ্যমাত্মার্পণং চেতি নবাঙ্গানি বিদুর্বুধাঃ।”- শিবপুরাণ রুদ্রসংহিতা

শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, সেবন, দাস্য, অর্চন, সর্বদা শিব বন্দনা, সখ্য এবং আত্মসমর্পণ। এছাড়াও ভক্তির বিভিন্ন উপাঙ্গও রয়েছে।

যে ব্যক্তি স্থির হয়ে সমগ্র মনকে শিবকেন্দ্রিক করে আসনে উপবেশন করে শরীর ও মনের দ্বারা শিবকথা শিব কীর্তনে শ্রদ্ধা ও সম্মান জ্ঞাপন করে প্রসণ্ণতাপূর্বক সেই অমৃত সমান কথা-কীর্তন রস পান করেন তার সেই সাধনাকে বলা হয়ে থাকে শ্রবণ।

যিনি তার হৃদাকাশে মহাদেব মহেশ্বরের দিব্য জন্ম-কর্ম-লীলা চিন্তা করে প্রেমভরে তা উদাত্তকণ্ঠে গীত করেন তার এই ভজন সাধনকে বলা হয় কীর্তন।

নিত্য মহাদেব পরমপুরুষ তৎপুরুষ মহেশ্বরকে সর্বদা ও সর্বত্র ব্যাপক (সকল বস্তুর মধ্যেই তিনি বিদ্যমান) জেনে যিনি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সব সময়ে নির্ভয়ে থাকেন তার সেই ভক্তিকে বলা হয়ে থাকে স্মরণ।

অরুণোদয় থেকে শুরু করে সব সময়ে প্রভুর কৃপাকে বা তার অনুকূলতাকে মনে রেখে মন-বুদ্ধি-চিত্ত-হৃদয় এবং ইন্দ্রিয়াদির দ্বারা নিরন্তর মহেশ্বরের সেবা করা হয় তাকেই সেবন নামক ভক্তি বলা হয়।

নিজেকে প্রভুর সেবক মনে করে অন্তর থেকে সর্বদা প্রভূ ভোলানাথের প্রিয় সম্পাদন করাকে দাস্য বলা হয়।

নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী শাস্ত্রীয় বিধি দ্বারা পরমাত্মারূপী আমাকে সর্বদা পাদ্য-অর্ঘ্য ইত্যাদি ষোড়শোপচারে বা পুষ্প-গন্ধ ইত্যাদি পঞ্চোপচারে পূজন করাকেই অর্চন বলা হয়ে থাকে।

অন্তরে ধ্যান ও বাক্য দ্বারা স্তোত্র বন্দনামূলক মন্ত্রাদির পাঠ করতে করতে শরীরের আট অঙ্গে ভূমি স্পর্শ করে ইষ্টদেবকে নমস্কার করাকে বলা হয় বন্দন।

প্রাণেশ্বর মহাদেব মহেশ্বর মঙ্গল-অমঙ্গল যা কিছুই সংঘটিত করেন না কেন তা ভক্তের মঙ্গল সাধনের জন্য অন্তরের এই রকম দৃঢ় ভক্তিকে বলা হয়ে থাকে সখ্য।

দেহ ইত্যাদি যা কিছু বস্তু নিজের বলে মনে করা হয়, সেই সমস্ত কিছু ভগবানের প্রসন্নতার জন্য তাকে সর্ব সমর্পণ করে নিজের জন্য কিছুই না রাখাকে এমনকি শরীর নির্বাহের চিন্তা রহিত হওয়াকে বলে আত্মসমর্পণ।

শিবশক্তির এই হল নয়টি অঙ্গ। এই গুলি ভোগ ও মোক্ষ প্রদানকারী। এর দ্বারা জ্ঞান প্রকাশিত হয় এবং ভক্ত বিজ্ঞানী হয়ে ওঠে।

No comments:

Post a Comment

 

Nataraja


Nataraj
Nataraja

Tantrik

Tantrik
Tantrik

Yabyum

Yabyum
Yabyum