তন্ত্রকে বুঝিতে হইলে প্রথমে বুঝিতে হয় তন্ত্রের জনক কে। তন্ত্রের জনক হইলেন দেবাদিদেব মহাদেব। তার শ্রী মুখ হইতেই তন্ত্র আগত হইয়াছে। তাই তন্ত্রকে আগম বলা হইয়া থাকে। মহাদেব বলিতে আমরা কি বুঝি? কোন দেবতা বিশেষ, কোন পরম পুরুষ বিশেষ অথবা চিত্রে বর্নিত সুন্দর মুখশোভা যুক্ত প্রেমময় ঠাকুর ইত্যাদি ইত্যাদি। ইহা কি সত্য?
ইহা সত্য নহে। যেহেতু আমাদের বিশ্বাসের দ্বারা প্রভাবিত হইয়াই আমরা জগৎ কে আপন আপন রুচি অনুযায়ী অনুভব করিয়ে থাকি ইহাও ওই এক প্রকার অনুভূতি বিশেষ। তিনি প্রথমত নিরাকার। যাহার কোন আকার নাই প্রকার নাই। তাহলে তাহাকে জানিব কি প্রকারে চিনিব কি প্রকারে? ইহার একমাত্র পথ হইল সমর্পন। নিজের কিছুমাত্র অবশিষ্ট না রাখিয়া আপনাকে তাহার শ্রী চরণে নিবেদন করিয়া দিলে তাহার কৃপা বর্ষিত হইয়া থাকে। এবং তাহার কৃপা ব্যাতীত তাহকে অনুভূতিগ্রাহ্য করা কদাপি সম্ভব পর নহে।
দ্বিতীয়ত তিনি নির্গুন। আমরা বস্তু বা ব্যক্তি সতন্ত্রতা তাহার গুন অথবা ধর্ম অনুযায়ী নিরুপন করিয়া থাকি। কিন্তু তিনি নির্গুন হইবার ফলে তাহাকে আমরা চিনিব কি ভাবে? জানিব কি ভাবে তিনি বস্তু না ব্যাক্তি? ইহার জন্য প্রয়োজন বীজ। তিনি অব্যক্ত হইয়াও ব্যক্ত হইয়াছেন। সেই বীজ মন্ত্র জপের মাধ্যমে তাহাকে আমরা বুঝিতে পারিব। চিনিয়া লইতে পারিব তাহার স্বরূপ। কারন বীজ গুলি আসিয়াছে জ্যমিতিক চিত্র হইতে। ক্ষর বিশ্ব ভুবনে অক্ষর স্বরূপ তিনি বীজের মাধ্যমে প্রকাশিত। সুতা বাহিয়া যেমন ঘুড়ির কাছে যাওয়া যায় এবং সেইখান হিইতে আকাশ সম্বন্ধেও একটা সম্যক ধারণা করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে সেই রকম বীজ মন্ত্র জপের মাধ্যমে তাহার আভাস মাত্র বুঝিতে পারা যায়।
বীজ মন্ত্র পাইব কোথা? ইহার একমাত্র উপায় সদগুরু। এইখানেই থামিয়া যাইতে হয়। বর্তমান কালে গুরু পদ বাচ্য ব্যাক্তির বহু সন্ধান পাওয়া যায় কিন্তু যথার্থ গুরু পাইবার সম্ভাবনা অতি ক্ষীন। সুতারং উপায়? মহাদেব বলিতে আপনি যাহা বুঝেন তাহার চরন তলে সমস্ত কিছু সমর্পন করিয়া তাহার কৃপা প্রার্থনা ছাড়া অন্য পথ নাই বলিলেই বলিতে পারেন। তাহার কৃপায় যদি আপনার সদ গুরু লাভ হইয়া থাকে। তিনি যদি কৃপা পরবশ হইয়া আপনাকে বীজমন্ত্র প্রদান করিয়া থাকে। জীবন এবং জগত সম্বন্ধে যথার্থ জ্ঞান দানের উদ্দেশ্যে যদি আপনাকে দিব্যচক্ষু দান করিয়া থাকেন তবেই আপনি তাহাকে জানিতে চিনিতে না পারিলেও কিছুটা বুঝিতে পারিবেন। তাহার পরে তো আসে তন্ত্র সাধনার কথা, তন্ত্র অভ্যাসের কথা। আর যদি পড়িয়া বুঝিয়া লহিতে পারেন তাহলে তো আপনি স্বংয় সেই মহাদেব। আর লোক ঠকাইবার জন্য ভেষজ বা দ্রব্য ব্যাবহার তো বিজ্ঞান বলিয়াই গন্য হইতে পারে। যেই বিজ্ঞান ব্যাবহার করিয়া আপনি মোবাইল তৈরী করিয়াছেন। ইহা তন্ত্র নহে তন্ত্রের আচার মাত্র। তন্ত্র এই সব হইতে বহু উর্ধে অবস্থিত। যেই খানে পৌঁছে যাইতে পারিলে আর পতন নাই, ভোগ নাই, যোগ নাই, উহাই মহা নির্বান। আর নির্বানের জন্য এক জন্মই যথেষ্ট।
মৃত্যুর পর কি আছে তাহা কে আর দেখিয়া আসিয়া বলিয়াছে। নব কলেবর সর্বদা নব কলেবর হিসাবেই বিবেচিত হইয়া থাকে তাহা নহে কি?
No comments:
Post a Comment