Social Icons

twitterfacebookgoogle pluslinkedinrss feedemail

Saturday, December 14, 2013

আত্মজ্ঞান নির্ণয় (ভাগ-শেষ)


বহিরন্ত যর্থাকাশং  সর্ব্বেষামেব বস্তুতঃ।
তথৈব ভাতি সদ্রূপো হ্যত্মা সাক্ষী স্বরূপতঃ।।২১।।
সকল বস্তুর মধ্যে আকাশ যেভাবে ভিতরে ও বাইরে অবস্থিতি করে বস্তু সমূহের আধার স্বরূপ অবস্থান করে, সেই ভাবে আত্মাও সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের ভিতরে ও বাইরে অবস্থিত হয়ে সাক্ষী স্বরূপ বিরাজিত থাকেন।
ন বাল্যং নাপি বৃদ্ধত্বং নাত্মনো যৌবনং জনু।
সদৈকরূপশ্চিন্মাত্রো বিকারপরিবর্জ্জিতঃ।।২২।।
আত্মার শৈশব, যৌবন ও বার্দ্ধক্য কোন কিছুই নাই। সেই আত্মা সব সময় এক এবং চিন্মাত্র। আত্মার কোন বিকারও নেই। বাল্য-যৌবন-বার্দ্ধক্য শরীরের অবস্থা কিন্তু আত্মা এই শরীরের মধ্যে অবস্থিত হয়েও শরীরের এই বিকার থেকে সর্বদাই মুক্ত থাকে।
জন্মযৌবনবার্দ্ধক্যং দেহেস্যৈব নচাত্মনঃ।
পশ্যন্তহোপি ন পশ্যন্তি মায়াপ্রাবৃতবুদ্ধয়ঃ।।২৩।।
জন্ম, যৌবন ও বার্দ্ধক্য দেহেরই এক একটি অবস্থামাত্র আত্মার নয়। যাদের বুদ্ধি মায়ার আবরণে মোড়া তারা এটা দেখেও দেখতে পান না বা বুঝতে পারেন না।
যথা শরাবতোয়স্থং রবিং পশ্যন্ত্যনেকধা।
তথৈব মায়য়া দেহে বহুধাত্মানমীক্ষতে।।২৪।।
যেভাবে অনেক গুলি জল পূর্ন পাত্রের মধ্যে সূর্য কে প্রতিফলিত দেখে আমরা ভাবি প্রত্যেক পাত্রের মধ্যেই বুঝি এক এক সূর্য্য আছে, সেই রকম বিভিন্ন দেহে সেই আত্মার প্রকাশ কে দেখে আমরা মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে ভাবি সেই এক আত্মা বুঝি অনেক।
যথা সলিলচাঞ্চল্যং মন্যতে তদগতে বিধৌ।
তথৈব বুদ্ধেশ্চাঞ্চল্যং পশ্যন্ত্যাত্মন্যকোবিদা।।২৫।।
জলরাশি আন্দোলিত হলে তার উপর প্রতিফলিত হওয়া চাঁদের ছায়া যে রকম আন্দোলিত হয় সেই রকম অজ্ঞব্যক্তি বুদ্ধির চাঞ্চল্য হলে আত্মাকেও সেই রকম চাঞ্চল্যপূর্ণ ভেবে থাকে।
ঘটস্থং যাদৃশং ব্যোম ঘটে ভগ্নেহপি তাদৃশং।
নষ্টে দেহে তথৈবাত্মা সমরূপো বিরাজতে।।২৬।।
একটা মাটির হাঁড়ির মধ্যে যে শুন্যস্থান থাকে তা ওই ঘট ভেঙে দিলে যে রকম শুন্য হয়েই অবিচল থাকে সেই রকম দেহের মধ্যেকার আত্মা দেহের বিনাশের পর সেই একই রকম থাকে তার কোন রকম ধ্বংস হয় না।
আত্মজ্ঞানমিদং দেবি পরং মৌক্ষৈকসাধনং।
জানন্নিহৈব মুক্তঃ স্যাৎ সত্যং সত্যং ন সংশয়ঃ।।২৭।।
হে দেবী আমি তোমাকে তিন সত্যি করে বলছি, আত্মজ্ঞানই একমাত্র পরম মোক্ষসাধন। যিনি এই আত্মাকে জানতে পারেন তিনি সাথে সাথেই মুক্তি লাভ করবেন এতে কোন সংশয় নেই।
ন কর্ম্মণা বিমুক্তোঃস্যান্ন মন্ত্রারাধনেন বা।
আত্মনাত্মানং বিজ্ঞায় মুক্তো ভবতি মানবঃ।।২৮।।
মানব তার কর্ম্মের দ্বারা বা মন্ত্র আরাধনার দ্বারা মুক্তি লাভ করতে পারে না। স্বীয় আত্ম র মধ্যে অবস্থিত আত্মা কে বিশেষ ভাবে জানলেই মানবের মুক্তি ঘটে থাকে।
প্রিয়োহ্যাত্বৈব সর্ব্বেষাং নাত্মনোহস্ত্যপরং প্রিয়ং।
লোকেহস্মিন্নাত্মসম্বন্ধাদ্ভবন্ত্যন্যে প্রিয়াঃ শিবে।।২৯।।
হে শিব প্রিয়ে, আত্মাই জীবসকলের পরম প্রিয়, আত্মা ছাড়া আর কিছুই প্রিয়বস্তু নেই। কিন্তু সময়ে সময়ে লোকেরা যে বিভিন্ন বস্তুকে প্রিয় বলে মনে করে থাকে তার কারন, সেই সেই বস্তু গুলির সাথে আত্মার কিছু না কিছু বিশেষ সম্বন্ধ যোগ থাকে।
জ্ঞানং জ্ঞেয়ং তথা জ্ঞাতা ত্রিতয়ং ভাতি মায়য়া।
বিচার্য্য আত্মত্রিতয়ে আত্মৈবৈকোহবশিষ্যতে।।৩০।।
এই ব্রহ্মাণ্ড মায়ার প্রভাবে জ্ঞান(যা জানা হয়), জ্ঞেয় (যাকে জানা হয়)ও জ্ঞাতা (যিনি জেনেছেন)এই তিন প্রকারে প্রকাশিত। জ্ঞান-জ্ঞেয়-জ্ঞাতা এই তিন প্রকাশিত ব্রহ্মাণ্ডদ্বারা আত্মবিচার করলে সেই অদ্বিতীয় পরমাত্মাকে অবশেষে জানা যায়, অবশেষ রূপে জানা যায়। যতক্ষন পর্যন্ত না মানুষের তত্ত্বজ্ঞান না হয় ততক্ষন চোখ,কান, নাক, জিভ, ত্বক ও মনকে, জ্ঞান, শব্দ, রূপ ও রসাদি সমুদয়কে জ্ঞেয় এবং নিজেকে জ্ঞাতা বলে তারা মনে করেন। কিন্তু যখন তার তত্বজ্ঞান হয়ে যায় তখন সে এই ব্রহ্মাণ্ডের সকল বস্তুর রূপ-নাম ইত্যাদি পরিত্যাগ করে ঐ জ্ঞান, জ্ঞেয়, জ্ঞাতা এই তিন ভিন্ন পদার্থকে সেই এক ও অখণ্ড পরমাত্মা বলে বিশেষ ভাবে অবগত হতে পারে।
জ্ঞানমাত্মৈব চিদ্রূপো জ্ঞেয় স্তাত্মৈব চিন্ময়ং।
বিজ্ঞাতা স্বয়মেবাত্মা যো জানাতি স আত্মবিৎ।।৩১।।
আত্মজ্ঞানের দ্বারা সেই চিদরূপী আত্মাকে জ্ঞানরূপে, সেই চিন্ময় আত্মাকে জ্ঞেয় রূপে, এবং আপন অন্তর স্থিত আত্মাকে জ্ঞানীরূপে যিনি জানতে পারেন তিনিই আত্মদর্শী। জ্ঞান-জ্ঞেয়-জ্ঞাতা এই তিনি পদার্থকেই যিনি আপন চিদাত্মারূপে জানেন তিনিই আত্মজ্ঞানী।
এতত্তে কথিতং জ্ঞানং সাক্ষান্নির্ব্বাণকারণং।
চতুর্ব্বিধাবধুতানামেতদেব পরমং ধনম্‌।।৩২।।
হে দেবী, সাক্ষাৎ নির্ব্বাণ(মুক্তির) কারণ স্বরূপ যে আত্মজ্ঞান এতক্ষন আমি তোমাকে বললাম, তা চার প্রকার অবধূতদের মহাধন বলে জানবে।

-ইতি আত্মজ্ঞান নির্ণয়।

No comments:

Post a Comment

 

Nataraja


Nataraj
Nataraja

Tantrik

Tantrik
Tantrik

Yabyum

Yabyum
Yabyum