Social Icons

twitterfacebookgoogle pluslinkedinrss feedemail

Friday, November 28, 2014

কিছু কথা

আমাদের মনে তন্ত্র সম্বন্ধে অনেক সংস্কার জমা হয়ে আছে যা আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গী কে স্বচ্ছ হতে দেয় না। আর আমরা তন্ত্র সম্বন্ধে কিছু মন গড়া কাল্পনিক চিন্তা ভাবনা কে এমন ভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করি যে তা আমাদের কাছে সত্য বলে প্রতিভাত হতে থাকে। এক জন তান্ত্রিকের সর্ব প্রথম কর্তব্য হল নিজের দৃষ্টি ভঙ্গী কে স্বচ্ছ করা, মনকে সব রকম সংস্কার থেকে মুক্ত করা।

কারণ তন্ত্র কোন আর্য সভ্যতার দান নয়। গুহা মানব যখন আগুনের ব্যবহার শুরু করে সভ্যতার প্রথম সোপানে তার পা রেখেছিল তন্ত্র বিদ্যা তখন থেকেই তার সাথে পা ফেলা শুরু করেছিল। আমাদের বহু প্রাচীন জ্ঞান-ধারনা এবং বিশ্বাস এই তন্ত্রের মাধ্যমেই সুরক্ষিত রয়ে গিয়েছিল বলেই আর্য সভ্যতা একটা বিশেষ আঙ্গিক পেয়ে প্রগতির চরম উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে আজ এত জনপ্রিয়। অনেকের মনে ধারনা আছে তন্ত্র বেদ থেকে বিশেষ করে অথর্ব বেদ থেকে নিষ্কাশিত হয়ে এসেছে। আমি এই মতে বিশ্বাসী নই কারণ তন্ত্র বেদের থেকে সম্পূর্ণ একটি অন্য ধারা, আর্য সমাজের জীবন চর্যার সাথে তন্ত্রের রীতি নীতি ইত্যাদির কিছু মিল পাওয়া যায় না। বরঞ্চ এটা বলা যায় যে তন্ত্রের সাথে মিশে গিয়ে বৈদিক সভ্যতা তার নিজস্ব পথ থেকে সরে এসে এমন একটা রূপ গ্রহণ করে যা জম্বু দ্বীপের মানুষদের কাছে গ্রহণ যোগ্য হয়।

তন্ত্রের মুল উদ্দেশ্য মানুষের হিত সাধন এবং কেবল মাত্র হিত সাধন। মানবতার যে দিকটি তন্ত্র সকল সময়ে খেয়াল রেখে চলে তা হল সাম্যবাদ। তন্ত্রে প্রত্যেকের সমানাধিকার আছে। কারণ তন্ত্র শিক্ষার কেবল মাত্র একটি মাত্র যোগ্যতা প্রয়োজন হয় তা হল মানব দেহ। মানব আকৃতি এই জন্যই দেবতা, পিশাচ(?) নাগ, গন্ধর্ব, দৈত্য, বানর ইত্যাদি বৈদিক যুগের যে সমস্ত মানব জাতি পরিলক্ষিত হত সকল জাতির মধ্যে তন্ত্র সাধনা লক্ষ্য করা যেতো। তন্ত্রের একমাত্র আরাধ্য দেবতা হলেন পশুপতি শিব। এই জন্যই আমরা আর্য সভ্যতা ভারত ভূমিতে প্রবেশ করবার বহু আগে থেকেই সিন্ধু সভ্যতা ইত্যাদিতে তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ স্বরূপ মূর্তি ইত্যাদি পেয়েছি। তাকে মহেশ্বর এই জন্যই বলা হয়ে থাকে যে ঈশ্বরের ধারনা গঠন করার আগে থেকেই তার অর্চনা সমগ্র বিশ্ব বাসী সেই অনাদি কাল থেকে করে আসছে।

কালপুরুষ নামে যে নক্ষত্র মণ্ডলী আকাশের মাঝে ধনুর্বাণ হাতে শিকারই রূপ গ্রহণ করে আছে সেই হল তার আদি রূপ। সেই অরূপ যখন প্রথম রূপ পরি গ্রহণ করেন তখন তিনি ওই কাল পুরুষ রূপেই প্রথম প্রকাশিত হন, এবং তার পায়ের কাছে যে কুকুর বসে আছে লুব্ধক নামে তিনিই ধর্ম। আমরা তাই আমাদের বৈদিক গ্রন্থ গুলিতে দেখতে পাই ধর্ম দেবতা কে কুকুরের রূপ পরিগ্রহ করতে।

যখন আমরা কোণ জাতি গঠন করিনি তার আগে থেকেই তন্ত্র আমাদের সাথে থাকার জন্যই তন্ত্রে কোন জাতের বিচার নেই এবং জ্ঞান মূলক এই ধর্মে কোন জাতি বিচার প্রয়োজন হয় না। যেটুকু প্রয়োজন হয় তা মানব শরীরের বিচিত্রতার জন্য। এই জন্যই তন্ত্রে জাতি বিচার নেই আছে প্রকৃতি বিচার। জ্ঞান হীন প্রত্যেক মানব দেহই হল পশু দেহ আর এই দেহের কর্তা পশুপতি।

আর আমাদের মন, প্রবৃত্তি সব কিছুই হল একটি পক্রিয়া, যার গতি মানতা এবং কারণ সম্বন্ধ তাকে বিভিন্ন ভাবে ব্যখাত করে থাকে। তন্ত্র কে বুঝতে হলে অনুভব প্রয়োজন। আর সঠিক অনুভবের জন্য মন কে পরিষ্কার রাখা আরও বেশী প্রয়োজন। চিমটাতে করে অঙ্গার তুললে যেমন আমরা তার তাপ অনুভব করতে পারি না , সংস্কার মুক্ত মন ছাড়া তেমনি তন্ত্র কে কোন দিন অনুভব করা যাবে না।

কারণ আমরা ছোট বেলা থেকেই অনেক কথা শুনে শুনেই বিশ্বাস করে নিয়ে থাকি, সেই কথা গুলিকে ত্যাগ না করলে মিথ্যার অতল সাগরে থেকে কিভাবে আমরা এই সর্ব জন গ্রাহ্য লোক মঙ্গলকারী স্বয়ং শিব হতে আগত এই মহা জ্ঞান গঙ্গা তে স্নান করতে পারবো। তবে হ্রদয়ে যদি চেষ্টা থাকে তাহলে সমগ্র শরীর সেই রাস্তা খুঁজে পাওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে থাকে। সামান্য তম চেষ্টা তেই তখন সাফল্য এসে যায়। এর জন্য চোখ বুজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার প্রয়োজন অনেক সময় পড়ে না। মানুষ চাঁদে যাওয়ার কথা ভেবেছিল বলেই আজকে সে চাঁদে চাষবাস করার কথাও ভাবছে। আমাদের সেই চেষ্টা টুকু করতেই হবে। না হলে মূর্তি আর উপাসনা ঘরে পৃথিবী ভর্তি হয়ে গেলেও ধর্মের এক পা হাঁটাও হবে না। তন্ত্র ই এক মাত্র এমন ধর্ম যার জন্য মানুষের কোন মূর্তি বা উপাসনার প্রয়োজন নেই, প্রকৃতির বিস্তৃত চারণ ভূমিই তান্ত্রিকের মন্দির, প্রকৃতির একটি অণু ই তার চিন্ময় মূর্তি।

 

Nataraja


Nataraj
Nataraja

Tantrik

Tantrik
Tantrik

Yabyum

Yabyum
Yabyum